শুক্রবার, ২৩ মার্চ, ২০১২

সুস্থতার জন্য হাসি

সুস্থতার জন্য হাসি



হাসি
হাসি হচ্ছে একপ্রকার মুখমণ্ডলীয় বহিঃপ্রকাশ, যা সচরাচরভাবে মুখের নমনীয় পেশীকে দুপাশে প্রসারিত করার মাধ্যমে অর্জিত হয়। মুখমণ্ডল ছাড়াও চোখের মধ্যেও হাসির বহিঃপ্রকাশ ফুটে উঠতে পারে। মানুষের হাসি আনন্দ, সুখ, বা মজা পাওয়ার উপলক্ষ হিসেবে হাসির চল আছে। কিছু ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেও হাসির ব্যবহার দেখা যায়, যা প্রচলিতভাবে মুখবিকৃতি বা ভেংচি কাটা হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও রাগ, ভয় এবং কিছুক্ষেত্রে কষ্টের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেও হাসি দেখা যেতে পারে। আন্তঃসাংস্কৃতিক গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বজুড়ে হাসি যোগাযোগের একটি অন্যতম হাতিয়ার ও মাধ্যম।সুখ প্রকাশকেই হাসির সবচেয়ে বহুল ব্যবহার হিসেবে স্বীকৃত ও বিবেচনা করা হয়। প্রাণীদের মধ্যে দাঁত প্রদর্শন করাকে হাসির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ মনে হলেও প্রায় সময়ই তা হুমকি বা সতর্ক করা হচ্ছেএমন অর্থ বহন করে। শিম্পাঞ্জীদের মাঝে ভয়ের প্রতীক হিসেবেও হাসি দেখা যায়।

হাসির আবেগের তেজ ও মুখের হাস্যভঙ্গীর ব্যাপ্তি ও আওয়াজের দ্বারা নানাভাবে হাসার প্রকারভেদ হতে পারে। কিছু উদাহরণঃ

    * অট্ট হাসি
    * স্মিত হাসি
    * কাষ্ঠ হাসি (শ্লেষ)
    * শুকনো হাসি
    * বাঁকা হাসি
    * খিল খিল হাসি
    * চাপা হাসি






লিওনার্দো দা ভিঞ্চির অঙ্কিত চিত্রকর্ম মোনা লিসা, মুচকি হাস্যরত





মুখ বন্ধকৃত অবস্থায় হাস্যরত এক ইরাকী কিশোরী।

মুখখোলা হাসি

 

রাজনীতিকরা প্রায় সময়ই আতিথেয়তা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে হাসি ব্যবহার করেন
বলের ওপর অঙ্কিত হাসি প্রকাশক চিত্র। মুখের হাসিকে প্রকাশ করার একটি সাধারণ পদ্ধতি
মঙ্গল গ্রহের একটি অংশ, যা দেখতে অনেকটা হাসির মতো
কিছু মানুষ যে অসময়েও হাসতে পারে তার নিদর্শন
হাস্যরত শিশু
হাসির প্রকারভেদ


বরিশাইল্লা হাসিঃ

ভুল করার পর একটা হাসি দিবে। দাঁত দেখা গেলে সব গুলা দেখা যাবে অথবা একটাও দেখা যাবে না। এর অর্থ হল মুই ত জানতাম এইডা ক্যামনে করতে হয়, এম্নেই একটু মজা করতে গিয়া ভুল কইরা ফেলাইসিএই বলে দ্বিতীয় দফা হাসি।

নোয়াখাইল্লা হাসিঃ

কিছু জিজ্ঞেস করার পর যদি সে মনে করে এর উত্তর না দিলেও চলবে তখন একটা ইন্ট্যাল্যাকচুয়াল হাসি দিবে। দাঁত অল্প দেখা যেতে পারে, তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দাঁত দেখা যায় না। হাসি টা সরাসরি প্রশ্নকর্তার দিকে মুখ ফিরে হয় না, কিঞ্চিত অন্যদিকে তাকিয়ে দেওয়া হয়। এর অর্থ হুম্মআমার মাথায় ঠিকই এই সম্পর্কে চিন্তা আছে। এটা নিয়ে তোমাকে না ভাবলেও হবে হাদারাম

দিনাজপুর/ রংপুর / গাইবান্ধার হাসিঃ

সিরিয়াস কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে হাসি দিয়ে উড়িয়ে দিবে। তখন ইচ্ছা করবে একটা থাপ্পড় মারি। উদাহরনঃ প্রজেক্টের ড্রইং শেষ করছ? পরশু কিন্তু স্যারকে দেখাতে হবে। এর উত্তরে সে বলবেঃ হেহ্প্রজেক্টএইটা আবার একটা প্রজেক্ট হইল গিয়েহেহ্কলে পানি নেই সেই জ্বালায় বাঁচিনে আবার প্রজেক্ট। হেহ্হেহ্ হেহ্ হেহ্ হেহ্ ( সে আসলে ড্রইং ঠিকই কমপ্লিট করে রেখেছে। চালাক সাজার চেষ্টা করছে। কিন্তু সে জানেনা যে সবাই জানে সে কত বড় বোকা বংশগত/ এলাকাগত কারনে, তাই তাঁর মিথ্যা কথা সবাই ধরে ফেলতে পারে।)

গার্লফ্রেন্ডের হাসিঃ

১) অতিরিক্ত পরিমাণে কেলানীঃ

যখন সে অতিরিক্ত পরিমানে ভেটকী দিয়ে কথা বলবে, বুঝবেন সে ইতিমধ্যে একটা দুই নম্বরী করে ফেলেছে। আপনার বন্ধুর সাথে প্রেম শুরু করে দিয়েছে আর তাঁর সে ব্যাপারে বিশাল লম্বা প্ল্যান আছে, আর তাঁর ধারনা সেই প্ল্যান সম্পর্কে কোনদিন আপনি জানতে পারবেন না।

২) মুচকী হাসিঃ
আজকে তোমাকে দিয়ে অনেক কিছু কিনাব।

৩)গম্ভীর হাসিঃ

গত ছয় মাসে তোমার কাছ থেকে তেমন দামী কিছু পাইনি।

৪) প্রান খোলা হাসিঃ

আমি সত্যি সত্যি তোমাকে অনেক ভালবাসি।

বয়ফ্রেন্ডের হাসিঃ

১) মাথা নিচু করে হাসিঃ
রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল।

২) চোখে চোখ রেখে মুচকী হাসিঃ
আমি সব বুঝি। আমাকে বোকা বানানো এত সহজ নয় লক্ষীটি।


৩) ভয়ংকর হাসিঃ
অন্যদিকে তাকিয়ে মুখ বন্ধ করা হাসি। দেখে বুঝা যায় সে ভিতরে হাসছে। এর অর্থঃ যাবা কই? যখন সময় হবে তখন আপলোড করে দিব। আমি কি এত বেকুব? ( আসলে সে বেকুব)

আব্বুর জুনিয়র কলিগ আংকেল এর হাসিঃ

আব্বুর রিটায়ারমেন্টের আগেঃ
(দাঁত কেলায়) কি খবর আংকেল কেমন আছ? পড়াশোনা সব ঠিক আছে ত? অনেক লম্বা হয়ে গেছ। রেগুলার খেলাধূলা কর বুঝি? স্যার কি বাসায় আছেন?

রিটায়ারমেন্টের পরেঃ
(রাস্তায় দেখা) -স্লামালাইকুম আংকেল ভাল আছেন?
- না চেনার ভান করে গম্ভীর ভাবে মাথা উপর থেকে নিচে ঝাঁকিয়ে একটা হাসি দিবেন। সেটা কে হাসি বলাও যেতে পারে আবার নাও যেতে পারে।

ছুটা বুয়ার হাসিঃ
খালাম্মাঃ বুয়া এই জায়গাটা ত কিচ্ছু মোছা হয়নি। কাল আরো ভাল করে মুছবে।
বুয়াঃ অন্যদিকে ফিরে মনে মনে হাসি। এর অর্থঃ তুই ত ভাল কইরা জানস আমি সব সময় এম্নেই মুছি। হুদাই কেন চিল্লাস?

বাঁধা বুয়ার হাসিঃ
খালাম্মাঃ বুয়া টেবিলের উপর দশ টাকা তুমি ঝাড়ু দেওয়ার সময় ভুলে উড়ে যায়নি ত?
বুয়াঃ না গো খালাম্মা (চরম বোকা মানুষের একটা হাসি। এক থেকে দশ পর্যন্ত ত সে গুনতেই পারেনা, আবার টাকা কি? – মনে মনে বুয়া বলে, আমি নিলেকে কি তোরে কমু?)

তরকারী-ওয়ালার হাসিঃ
মাথা নিচু করে দাঁত বের করে বাম থেকে ডানে মাথা ঝাঁকাতে থাকবে। এর অর্থঃ আপনি যেই দাম বলছেন সেই দামে আমি কখনো বিক্রি করিনি এটা বলব না, তবে এখন আমার দিন ভাল যাচ্ছে বিধায় আপনাকে এই দামে দিতে পারছিনা এবং সেজন্য আমি খুবই লজ্জিত। তবে এর বদলে আপনি এই দামেই কম পরিমাণের নিতে পারেন কিংবা আপনি যদি পরিমাণ আরো বেশী নিন তাহলে আমি ডিসকাউন্ট দিব।

জুতার দোকানদারের হাসিঃ
মাটিতে বসেই মাথা নিচু করে হাত মুখে দিয়ে চিন্তা করার ভংগিতে দাঁত ও জিহবা বের করে হাসি। এর অর্থঃ আপনার জুতা পড়ার দরকার নেই, খালি পায়ে হাঁটুন।


সুস্থতার জন্য হাসি
হাস্যরত সুস্থ শিশু
হাসি সুখ, আনন্দ ও সুস্থতার প্রতীক। হাঁচি কিংবা কাশির শব্দ শুনলে যেমন আমরা বুঝতে পারি অসুস্থতা, তেমনি হাস্যরসের আওয়াজ শুনলে আমরা বুঝি বিরাজ করছে সুখ, আনন্দ ও সুস্থতা। হাসি প্রাকৃতিক, হাসি স্বাভাবিক। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে হাস্যোজ্জ্বল হয়ে ওঠে প্রকৃতি। বিকেলে মিষ্টি রোদে হাসে প্রকৃতি। রাতে চাঁদের স্নিগ্ধ হাসিতে মেতে ওঠে পৃথিবী। ফুলের হাসি, বাতাসের মৃদুমন্দ শিহরণ, বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ, পাখির উচ্ছ্বাস গান, নদীর কলকল হাস্যধ্বনি সব মিলিয়ে আমাদের আনন্দের অনুভূতিকে মুগ্ধ করে প্রকৃতি। তাই বলছিলাম, প্রকৃতির স্বাভাবিক অভিব্যক্তি হাসি।
হাসতে নাকি জানে না কেউ
কে বলেছে ভাই,
এই শোন না কত হাসির
খবর বলে যাই
খোকন হাসে ফোকলা দাঁতে,
চাঁদ হাসে তার সাথে সাথে,
কাজল বিলে শাপলা হাসে,
হাসে সবুজ ঘাস,
খলসে মাছের হাসি দেখে,
হাসেন পাতিহাঁস
হ্যাঁ, প্রকৃতিতে স্বাভাবিক অবস্থায় সার্বক্ষণিক বিরাজ করে, বিষাদ নয় আনন্দ। কিন্তু জীবনযুদ্ধে, নাগরিক ব্যস্ততায়, সাফল্যের প্রতিযোগিতায় আমরা হারিয়ে ফেলি সে আনন্দ। ফুলের সুগন্ধ নেয়ার সময় নেই আমাদের, পাখির গান শোনার সময় কই! আমরা দ্রুত ধাবমান ফাস্ট ফুডের প্রতি, ওয়ান স্টপ শপিং মল কিংবা ই-ব্যাংকিংয়ের দিকে। ফলে আমাদের জীবন থেকে ছন্দ হারিয়ে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে আনন্দ। দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ছি আমরা। তাই আমাদের এখন আবার ফিরে যেতে হবে হাসির কাছে।
আপনারা হয়তো অবাক হচ্ছেনকিন্তু হ্যাঁ, সত্যিই হাসির রয়েছে নানা মনোদৈহিক উপকারিতা। হাসি শুধু মজা করার জন্য নয়, হাসি আমাদের অনেক দিক দিয়ে সুস্থ রাখতে পারে, পারে অসুস্থকে ভালো করে তুলতে এ কথা বৈজ্ঞানিক সত্য। হাসি শক্তিদায়ক, হাসি আমাদের রোগ প্রতিরোধক শক্তিকে উজ্জীবিত করে, হাসি ব্যথা লাঘব করে এবং মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়
হাসি সুস্থতার লক্ষণ
মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিন ইন বাল্টিমোর-এর গবেষকরা রোগ নিরাময়ে হাসির প্রয়োগ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছেন। তারা প্রমাণ পেয়েছেন, রোগ নিরাময়ে হাসি উপকারী। তারা বলেছেন, অবদমিত ক্রোধ, ঘৃণা আমাদের ইম্যিউন সিস্টেমকে নিস্তেজ করে দেয়। অপরপক্ষে হাসি, আনন্দ ইম্যিউন সিস্টেমকে উজ্জীবিত করে। ক্যালিফোর্নিয়ার লোমা লিন্ডা ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকরা দেখিয়েছেন, হাসি আমাদের ইম্যিউন সিস্টেমকে উত্তেজিত করে শ্বেতকণিকা টিসেল তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করে, ফলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি দৃঢ় হয়, নানা জীবাণু সংক্রমণের বিরুদ্ধে আমরা বিজয়ী হতে পারি। আমরা যখন হাসি তখন আমাদের রক্তচাপ কমে যায়। বৃদ্ধি পায় ন্যাচারাল কিলার সেল যারা হিউমার ধ্বংস করে ও ভাইরাসকে মেরে ফেলতে সক্ষম। বৃদ্ধি পায় গামা ইন্টারফেরন, টি সেল ও বি সেল, ফলে বেশি বেশি তৈরি হয় অ্যান্টিবডি। হাসি শ্বাসতন্ত্রকে পরিষ্কার করে দেয় শ্বাসনালীতে লেগে থাকা মিউকাস ছুটিয়ে দিয়ে। এ সময় বেড়ে যায় থুথুতে নিঃসৃত স্যালিভারি ইম্যিউনোগে¬াবিউলিন এয়ের পরিমাণ। ফলে তা শ্বাসতন্ত্রে জীবাণু সংক্রমণ প্রতিহত করে।
এ ছাড়া হৃদরোগে হাসি ধন্বন্তরি। সেন্টার ফর প্রিভেনটিভ কার্ডিওলজির পরিচালক ডা. মাইকেল মিলারের নেতৃত্বে মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল চিকিৎসা বিজ্ঞানী দীর্ঘদিন গবেষণা করে হাসির সাথে রক্তনালীর সুস্থতার সম্পর্ক আবিষ্কার করেন। এ গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ছিল প্রায় ৩০০ ব্যক্তি। যাদের অর্ধেকের বাইপাস সার্জারি করা হয়েছে বা যারা হার্ট অ্যাটাকে ভুগেছেনতারা দেখেছেন, হৃদরোগীদের উৎফুল্ল হওয়ার প্রবণতা প্রায় ৪০ শতাংশ কম। দেখা গেছে, বিষণ্ণতা বা দুশ্চিন্তায় এদের রক্তপ্রবাহ প্রায় ৩৫% ক্ষতিগ্রস্ত হয় অথচ হাসি আনন্দে এদের রক্তপ্রবাহ প্রায় ২২% বৃদ্ধি (Vasodilatation) পায় এবং এন্ডোথেলিয়াম সুদৃঢ় হয়। যুক্তরাজ্যেও গবেষণায় একই ধরনের ফল পাওয়া গেছে। আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজি তাই মন্তব্য করেছে, এখন থেকে বলতে হবে হৃদরোগ প্রতিরোধে এক্সারসাইজ, ধূমপান থেকে দূরে থাকা, স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা কোলেস্টেরল-বর্জিত খাদ্য খাওয়ার মতোই হাসি আনন্দময় জীবন গুরুত্বপূর্ণ।
ক্যান্সার ট্রিটমেন্ট সেন্টার অব আমেরিকার (CTCA) ন্যাশনাল ডিরেক্টর ডা. ক্যাথরিন পুকেট মিড-ওয়েস্টার্ন রিজিওনাল মেডিক্যাল সেন্টারে প্রচলিত অ্যান্টিক্যান্সার চিকিৎসার পাশাপাশি ‘Laughter Therapy’ প্রয়োগ করে বিস্ময়কর ফলাফল পেয়েছেন। শুধু ঔড়শবং বা কৌতুকপূর্ণ মুভি দেখা নয়, তিনি প্রচলন করেছেন কিছু হাস্যকর (!) শারীরিক কসরতের (Laughter Exercise)এতে ক্যান্সার রোগী ও তার স্বজনরা অংশগ্রহণ করে আনন্দদায়ক অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, হাসি ক্যান্সার সারাতে পারবে না বটে কিন্তু জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দেয়, জীবনযাপন সহজ করে তোলে।
বিষণ্ণতা, ব্যথা এবং মানসিক দ্বন্দ্বের প্রতিরোধক হিসেবে হাসির জুড়ি নেই। কৌতুক কিংবা ক্ষণিক আনন্দ আমাদের মানসিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে, মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়। প্রাণ খুলে হাসুন শরীর মন চাঙা হয়ে উঠবে অন্তত ৪৫ মিনিটের জন্য। একটি বিখ্যাত ইংরেজি উক্তি আছে এরকম A clown is like an Aspirin, only he works twice as fast. আমরা যখন হাসি তখন আমাদের শরীর রিল্যাক্স হয়ে পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, আনন্দময় হাসির সাথে সাথে শরীরে এন্ডোরফিন (Endorphin) ও সেরোটনিন (Serotonin) নিঃসরণ হয়। আর Endorphin বলা হয় natural pain killerহাসি স্ট্রেস হরমোনগুলোর নিঃসরণ কমিয়ে দেয়, ফলে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়।
কঠিন বিরূপ পরিস্থিতিতে অবলীলায় হাসতে পারা এক বিরল যোগ্যতা। আপনি যখন হাসতে থাকেন, তখন কোন বিষণ্ণতা, ক্রোধ, দুশ্চিন্তা বা দুঃখবোধ আপনাকে গ্রাস করতে পারে না। হাসি আপনার মনকে ভালো করে দেয় এবং এই ভালো লাগা রয়ে যায় হাস্য-কৌতুকের পরিবেশ থেকে চলে আসার পরও অনেকক্ষণ।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, ১০০ বার হাসি ১০ মিনিট নৌকা চালানো কিংবা ১৫ মিনিট সাইকেল চালানোর সমান শারীরিক কসরত। রক্তচাপ কমে যায় বটে কিন্তু শারীরিক সঞ্চালনের

কারণে সবখানে রক্ত চলাচল যায় বেড়ে। রক্তে সংযুক্ত হয় বেশি পরিমাণ অক্সিজেন। হাসিতে ডায়াফ্রাম, পেটের ও রেসপিরেটরি মাংসপেশিসমূহ এবং মুখ, এমনকি পা কিংবা পিঠের মাংসপেশির চমৎকার এক্সারসাইজ হয়। এজন্য উচ্চ হাসির পর আমরা খানিকটা ক্লান্ত হয়ে পড়ি এবং হাঁপাতে থাকি। আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন ও গভীর হয়ে পড়ে। শরীরের অভ্যন্তরেও ঘটে অনেক শারীরবৃত্তিক ও রাসায়নিক পরিবর্তন। সব মিলিয়ে এ যেন খানিকটা অ্যারোবিকশরীরচর্চা। তাই বলা হয় হাসি থেকে ওজন কমার মতো উপকারও পেতে পারি। এ ছাড়া হাসি স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়, হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমায়। আমাদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় বিরাট ভাবে। হাসির জানালা দিয়ে উবে যায় যে কোন চাপা ক্ষোভ, রাগ, দুঃখ কিংবা গ্লানিবোধ, যা হয়তো বড় কোন মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারতো।
হাসি হাঁচি-কাশির চেয়েও সংক্রামক। তবে ক্ষতি নয়, স্বাস্থ্য সুবিধা অনেক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী, স্বাস্থ্য হচ্ছে সম্পূর্ণ শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সুস্থতা। হাসি এই সংজ্ঞার সবদিকই পূরণ করে দিতে পারে। এনে দিতে পারে শারীরিক সুস্থতা, মানসিক সুস্থতা এবং সামাজিক সুস্থতা। সুতরাং হাসি চাইই চাই।
হাসি দেয় শারীরিক সুস্থতাঃ হাসিতে ভাল ব্যায়াম হয়। মুখের পেশির, বুকের পেশির, পিঠের পেশির, পেটের পেশির। হাসতে হাসতে তো বুকে পিঠে খিল ধরেই যায়। এক দন্ডের আন্তরিক হাসিতে কয়েক মিনিটের ব্যায়ামের সমান ক্যালরি খরচ হয়। হাসি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শরীরে রোগ প্রতিরোধকারী এন্টিবডির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, হাসি হৃদরোগের সম্ভাবনা কমায়। কমায় হার্ট এ্যাটাকের সম্ভাবনাও। হাসি উচ্চ রক্তচাপ কমায়। স্ট্রোকের সম্ভাবনাও কমায়। যারা নিয়মিত হাসেন, তাদের রক্তচাপ কম থাকে। হাসি হজমে সাহায্য করে, হজম করা খাদ্যবশোষণেও সহায়তা করে। হাসি স্ট্রেস হরমোন কমায়। শরীরকে রিলাক্স করে। বাতের ব্যথাও কমাতে পারে।
হাসি দেয় মানসিক সুস্থতাঃ হাসি শক্তিশালী মানসিক দাওয়াই। হাসিতে মুড বা মানসিক অবস্থা ভাল হয়, মন মরা ভাব দূর হয়। হাসিতে রাগ পানি হয়ে যায়, মগজ ঠান্ডা থাকে। রস রসিকতা মানুষের চিন্তাধারা বদলে দেয়। টেনশন দূর করে, দুশ্চিন্তা দূর করে। দূর করে একাকীত্ব। হাসলে মন ভালো লাগে, শরীর ভালো লাগে। হাসলেই দেখবেন, আপনার বেশ ভাল লাগছে। মানুষের আচরণও বদলে দিতে পারে এই হাসি। হাসি মস্তিষ্ককে উজ্জীবিত করে, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়, মস্তিষ্ককে অধিক তথ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে।
হাসি দেয় সামাজিক সুস্থতাঃ দৈনন্দিন জীবনে হাসি চাই-ই চাই। হাসি আমাদের কাজ করার স্পৃহা বাড়িয়ে দেয়। আমাদেরকে এক অপরের কাছাকাছি নিয়ে আসে। দুজনের মধ্যে স্বল্পতম দূরত্ব হচ্ছে এই হাসি। আমরা যখন এক সঙ্গে হাসি, তখন আমরা একাকার হয়ে যাই। অদেখা সামাজিক বন্ধনে বাঁধা পড়ে যাই। যথেষ্ট প্রয়োজন এই মিলনটা। আর হাসি উপভোগ্য হয় সবচেবেশি যখন এটা অন্যদের সাথে ভাগ করে নেয়া হয়।
তাই বলা হয়, হাসি শ্রেষ্ঠ প্রাকৃতিক ওষুধ। বিনা খরচে হাসি রোগমুক্তি দেয়। এর জন্য আপনার কোন জিমে যাওয়ার দরকার নেই। দরকার নেই কোন প্রশিক্ষণের। হাসি আমাদের জন্মগত প্রবৃত্তি। নবজাতক শিশু জন্মের প্রথম সপ্তাহেই হাসতে শুরু করে এবং প্রথম মাসেই সশব্দে হাসতে পারে। বড় হতে হতে গাম্ভীর্য এসে ভর করে আমাদের ওপর। তাই হাসি শিখতে হলে, প্রাণ খুলে হাসতে হলে তাকাতে হবে শিশুদের দিকে। তাদের দুনিয়া আনন্দময়। তুচ্ছ কারণে তারা হাসতে পারে। হাসার জন্য তাদের কোন লজিক লাগে না। তাই আসুন আমরা বেশি বেশি হাসি, জীবনকে আনন্দময় করে তুলি এবং সুস্থ সুন্দর জীবন যাপন করি।



সুস্থতার জন্য হাসি
সবশেষে একটা কৌতুক। সামান্য হাসি আপনার সাথে ভাগ করে নেয়ার চেষ্টা করি। অফিসের বস পিয়নকে একটা ম্যাচবাক্স কিনে আনতে বললেন। পিয়ন দোকান থেকে ম্যাচবাক্স কিনে এনে দিল বসকে। জ্বালাতে গিয়ে বস দেখলেন, একটা কাঠিও জ্বলছে না। বসের রাগত কণ্ঠঃ কী এনেছিস রে বোকা? একটা কাঠিও তো জ্বলছে না!পিয়নের উত্তরঃ কী যে বলেন স্যার? প্রত্যেকটা কাঠি আমি নিজে জ্বালিয়ে দেখেই ম্যাচটা এনেছি স্যার।

1 টি মন্তব্য: