বুধবার, ২৮ মার্চ, ২০১২

বাগদাদের ব্যাটারি এবং পীরি রইস এর ম্যাপ।রহস্যময় দুনিয়া-২

রহস্যময় পাত্র-১৯৩৮ সাল।ইরাক জাতীয় জাদুঘরের পরিচালক জার্মান প্রত্নতত্ত্ববিদ ডব্লিউ কনিং জাদুঘর পরিদর্শনে বের হলেন।হঠাৎ তার চোখ পড়ল পার্সিয়ান যুগের একটি হলদাঠে পাত্রের উপর।পাত্রটি ১৯৩৬ সালে বাগদাদের নিকটবর্তী খুজুত রাবু নামক গ্রাম থেকে মাটি খুড়ার সময় আবিষ্কার করা হয়।ভাল করে ৬ ইঞ্চি উচু পাত্রটি লক্ষ্য করতেই ভদ্রলোক বেশ অবাক হল।পাত্রটির ভিতর ৫ ইঞ্চি উচু ও দেড় ইঞ্চি বেড়ের কপার সিলিন্ডার এবং এর মাঝে একটি লোহার দন্ড বিদ্যমান।সিলিন্ডারটির নীচের অংশ কপার ডিস্ক দ্বারা আচ্ছদকৃত অবস্থায় বিটুমিন দ্বারা সিলকৃত ।সিলিন্ডারটির কিনারা ৬০-৪০ লেড-টিন সংকর ধাতুর আস্তরে ঝালাইকৃত ছিল যা একটি আধুনিক ঝালাই এর সাথে তুলনীয়।উপরের অংশটিও বিটুমিন দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল।এবং ভিতরের রডটিতে এসিডিক এজেন্ট দ্বারা ক্ষয়ের সুষ্পষ্ট চিহ্ন বিদ্যমান।
কপার এবং আয়রনের যুগল অবস্থা এবং এসিডিটির লক্ষণ দেখে কনিং মোটামুটি নিশ্চিত হলেন এই পাত্রটি বিদুৎ উৎপাদনে ব্যবহার হত।এই নিয়ে আরো গবেষনা শেষে ১৯৪০ সালে তিনি লেখালেখি শুরু করেন।এবং তিনি সুস্পষ্টভাবে ঘোষনা দেন যে এই পাত্রটি প্রাচীন যুগের ব্যাটারি।যা বর্তমানে বাগদাদের ব্যাটারি নামে পরিচিত।

সমস্যা কোথায়?-প্রাচীন যুগের মানুষরা এই পাত্রটিকে ব্যাটারি রুপে ব্যবহার করেছিল তার প্রমাণ কি? আর করলেই বা সমস্যা কি? আপনার মনে হয়ত এ প্রশ্ন উঠতে পারে।
১৯৪০ সালেই জেনারেল ইলেকট্রিক এর ইন্জিনিয়ার "উইলার্ড এফ, এম, গ্রে" "কনিং" এর লেখা পড়েন।তিনি জার্মান রকেট বিজ্ঞানী উইলি লে এর সহযোগীতায় বাগদাদ ব্যাটারির হুবুহু একটি মডেল তৈরী করেন।কপার সালফেট দ্রবণ ব্যবহার করে তিনি হাফ ভোল্ট বিদুৎ উৎপাদনে সক্ষম হন।একই মডেলে ১৯৭০ সালেও ০.৮৭v বিদুৎ উৎপাদন করা হয়।এখন কথা হচ্ছে আমরা জানি ভোল্টা ১৮০০খ্রি: প্রথম ড্রাইসেল ব্যাটারি আবিষ্কার করেন।কিন্তু প্রাচীন এ ব্যাটারী আবিষ্কারের ফলে প্রমাণিত হয় ১৮০০ সালের আগেই পৃথিবীতে ব্যাটারি আবিষ্কৃত হয়েছিল। যা ব্যাটারি আবিষ্কারের ইতিহাসকে কমপক্ষে আরও ১৮০০ বছর পিছনে ফেলে দিবে।তাহলে প্রাচীন যুগে কি আমাদের জানার বাইরে এমন কোনো সভ্যতা ছিল যা জ্ঞান বিজ্ঞানে অনেক অগ্রসর ছিল? আমাদের ইতিহাসবিদরা যা জানেন এবং যা আমাদের শিখিয়েছেন তবে কি তা ভুল?
বাগদাদের ব্যাটারি


উইলার্ড গ্রে এর তৈরী করা রিপ্লেক্যা



পীরি রইস এর ম্যাপ
১৯২৯ সালের ৯ অক্টোবর জার্মান ধর্মতত্ববিদ জি,এডলফ ডেইসমান টোপকাপি(তুরস্ক) প্রাসাদ এ কাজ করার সময় এর লাইব্রেরী থেকে একটি প্রাচীন ম্যাপ খুজে পান।ম্যাপে পাওয়া তত্ত্বমতে এ ম্যাপটি ১৫১৩খ্রি: এ সংকলিত করেছিলেন তুর্কি নৌ অ্যাডমিরাল পীরি রইস ।তিনি ম্যাপটি আকাতে অ্যারাবিয়ান,ইন্ডিয়ান,পুর্তগীজ এবং কলম্বাসের ম্যাপের সাহায্য নেন।ম্যাপটিতে ইউরোপের পশ্চিম উপকূল থেকে ধরে পশ্চিম আফ্রিকার উপকূল থেকে দক্ষিন আমেরিকার পূর্ব প্রান্থ এবং অ্যান্টর্কটিকার উত্তর উপকূল পর্যন্ত নিখুতভাবে অংকিত আছে।এতে নিখুতভাবে আকা আছে আটলান্টিক এর বিভিন্ন দ্বীপমালা এবং জাপান।বর্তমানে ম্যাপটি টোপকাপি প্রাসাদের লাইব্রেরী এবং একটি কপি বালির্ন এর স্টেট লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে। এবং তা জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত নয়।যা বর্তমানে পীরি রইস এর ম্যাপ নামে পরিচিত।

রহস্যটা কোথায়?- প্রাচীন যুগের মানুষ ম্যাপ একেছে এতে সমস্যা কোথায়? সমস্যা হলো ম্যাপটির অনেক অংশ বর্তমান যুগের মানচিত্রর সাথে প্রায় নিখুতভাবে মিলে যায়।তাছাড়া সবচেয়ে বড় ধাধা হল অ্যান্টর্কটিকাকে নিয়ে।যদি পীরি রইস প্রথম ম্যাপের এ অংশটি আকেন তবু ধাধা থেকে যায় কারন ১৫১৩ সালে অ্যান্টর্কটিকা আবিষ্কৃত হয়নি।মহাদেশটি আবিষ্কার হয়েছে ১৭৭৩ খ্রি:এ ।এর কিছু অংশ আবিষ্কার হয়েছে বিংশ শতাব্দিতে এসে।তাছাড়া ম্যাপটিতে অ্যান্টর্কটিকার কুইন মাউড ল্যান্ড কে আইস-ফ্রি জোন হিসাবে দেখানো হয়েছে।যা জটিলতা আরও বাড়ায়।কারন সর্বশেষ কুইন মাউড ল্যান্ড আইস-ফ্রি জোন ছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০০ হাজার বছর আগে। এত আগে কোন মানব সভ্যতা এত উন্নত ছিল যারা এধরনের একটি ম্যাপ আকতে সক্ষম ছিল?তাহলে কি আমরা যে মানব সভ্যতার ইতিহাস জানি তা কি ভুল? প্রাচীনকালে কি এমন কোনো মানব সভ্যতা কি ছিল যারা জ্ঞান বিজ্ঞান বা প্রযুক্তিতে অনেক অগ্রসর ছিল?তবে পীরি রইস এর ম্যাপ এর রহস্য কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ম্যাপটি ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখতে পারবেন ভৌগলিক সীমারেখা আকতে উপর থেকে দেখতে হয়েছে।এই ম্যাপ নিয়ে রহস্য আরো বাড়িয়েছেন অধ্যাপক চালর্স এইচ, হ্যাপগুড এবং অঙ্কশাস্ত্রবিদ ডাবলিউ, স্টেচান।তাদের মতে এ ম্যাপের সাথে কৃত্রিম উপগ্রহ থেতে তোলা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের বেশ মিল আছে।যা উপর থেকে দেখে ম্যাপটি আকা হয়েছিল ধারনাকে আরও প্রতিষ্টিত করে। তাহলে কি প্রাচীন যুগের কোন মানবসভ্যতার কাছে বেলুন বা অন্য কোনো উড়ার যন্ত্র ছিল বা ছিল ছবি তোলার ক্যামেরা?
পীরি রইস এর ম্যাপ


ম্যাপে ইউরোপ

আধুনিক ম্যাপের সাথে পীরি রইস এর ম্যাপের তুলনা(দ: আমেরিকা অংশ)


এইসব রহস্যের ব্যাখ্যা কি?- ইতিহাসবিদ বা গবেষক কেউই এইসব রহস্যর কোনো ব্যখ্যা দেয় নি বা বলা ভাল দিতে পারেনি।তাই বলে কি আপনার চিন্তা থেমে থাকবে? আপনি ধারনা করতে পারেন টাইম মেশিনে করে আমাদের অদূর ভবিষতের কোনো প্রজন্ম হয়ত অতীতে গিয়েছিল। তারা হয়ত এসব করতে পারে।বা ধারনা করতে পারেন আটলান্টিস এর মত কোনো অতি উন্নত সভ্যতা হয়ত প্রাচীনকালে ছিল।যা পরবর্তীকালে কোনো কারনে ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে আমি এইভাবে ভাবি না।আমার ধারনাটা অন্যরকম। এইসব রহস্যময় নিদর্শন নিয়ে আরো কিছু লেখা আপনাদের সাথে শেয়ার করার ইচ্ছা আছে আমার।তারপর সিদ্ধান্ত।

অ্যাডোনিসঃ প্রেমের দেবী আফ্রোদিতি যার সৌন্দর্যে অন্ধ হয়েছিলেন !

Justify Full


Justify Full

গ্রীক পুরানে বর্ণিত সবচেয়ে সুন্দর ও আকর্ষণীয় পুরুষ হলেন অ্যাডোনিস। তার সৌন্দর্য এতোটাই বেশি ছিল যে প্রেমের দেবী আফ্রোদিতি পর্যন্ত তাকে ভালবেসে ফেলেছিলেন।
গ্রীক পুরানে বর্ণিত অ্যাডোনিস ও দেবী আফ্রোদিতি এর কাহিনীটি তাই বেশ জনপ্রিয় এবং বিয়োগান্তক ও বটে।



সুপুরষ অ্যাডোনিস এর পরিচয় দেয়া যাক। যদিও এটা কিছুটা বিব্রতকর , তবুও বলতে হয় অ্যাডোনিস ছিল মিরহা এর পুত্র, এবং অ্যাডোনিস এর জন্ম হয়েছিলো একটি পাপ এর পরিনতি হিসেবে। মিরহা ছিল রাজা থিয়াস( আরেক নাম সিনিরাস) এর অনন্য সুন্দরী কুমারী কন্যা। মিরহা এর সৌন্দর্য নিয়ে তার পিতার বেশ গর্ব ছিল। এমনকি তিনি মনে করতেন তার কন্যা সৌন্দর্যের দেবী আফ্রোদিতি এর চেয়েও বেশি সুন্দরী। আফ্রোদিতি অবশ্যই থিয়াস এর এই মনোভাব মেনে নিতে পারেন নি। তাই তিনি কন্যা মিরহা এর অন্তরে তৈরি করে দিলেন তার নিজেরই পিতার জন্য কামনার আগুন, যেটা থেকে শেষ পর্যন্ত মিরহা বের হয়ে আসতে ব্যর্থ হয়। দাসীদের সহযোগিতায় বেশ ছলনার সাহায্যে নিজের পরিচয় গোপন রেখে রাজা থিয়াস এর সাথে মিরহা মিলিত হয়, যার ফলাফল হিসেবে মিরহা এর গর্ভে আসে একটি সন্তান। রাজা থিয়াস যখন বুঝতে পারেন যে যার সাথে তিনি মিলিত হয়েছেন সেটি তার নিজেরই কন্যা তখন তিনি ক্রোধে মত্ত হয়ে পড়েন। তিনি মিরহা কে হত্যা করতে উদ্যত হলেন।



হতবিহব্বল মিরহা নিজের বিপদ বুঝতে পেরে পালিয়ে গেলো। সে করজোড়ে দেবতা কুলে প্রার্থনা করলো তাকে যেন অদৃশ্য অথবা লুকিয়ে ফেলা হয়। তার বিপদ দেখে আফ্রোদিতির দয়া হল। তিনি মিরহা কে পালিয়ে যেতে সাহায্য করলেন। তিনি মিরহা কে রূপান্তরিত করলেন একটি গাছে যাতে রাজা থিয়াস থাকে কখনো খুজে না পায়। তার নামানুসারে গাছটার নাম হয় পরবর্তীতে মীড় গাছ।




নয় মাস পরে গাছের গুড়ি ফেটে সেখান থেকে বের হয়ে আসলো একটি পুত্র সন্তান, যার নাম অ্যাডোনিস। দেবী আফ্রোদিতি ভূমিষ্ঠ অ্যাডোনিস কে দেখলেন এবং তার রুপে তৎক্ষণাৎ মুগ্ধ হলেন। আফ্রোদিতি অ্যাডোনিসকে অন্যভাবে চেয়েছিলেন, তিনি চেয়েছিলেন অ্যাডোনিস শুধু তারই হোক, তাই তিনি অ্যাডোনিস এর মাতৃভুমিকা নিতে চাইলেন না। তিনি বরং অ্যাডোনিসকে লুকিয়ে ফেললেন একটি সিন্দুকে এবং নিয়ে গেলেন দেবী পার্সিফোন এর কাছে। পার্সিফোন ছিলেন মৃতদের রানী ও পাতালপুরীর দেবী, তিনি অ্যাডোনিস এর অভিভাবকত্ব নিতে সম্মত হলেন।



শিল্পীর চোখে অ্যাডোনিসের জন্ম

কিন্তু ঝামেলা তখনই তৈরি হল যখন অ্যাডোনিস বড় হতে লাগলো, এবং আফ্রোদিতি পার্সিফোন এর কাছে অ্যাডোনিসকে দাবী করলেন। পার্সিফোন ও অ্যাডোনিসকে ভালবেসে ফেলেছিলেন এবং অ্যাডোনিসকে দিতে চাইলেন না।


পার্সিফোনঃ শিল্পীর চোখে


অ্যাডোনিস


আফ্রোদিতিঃ শিল্পীর চোখে

দুই দেবীর মাঝে চরম বিদ্বেষ তৈরি হল, এবং কেউই অ্যাডোনিসকে হারাতে চাইলেন না। অবশেষে জিউস আসলেন মধ্যস্ততাকারী হিসেবে। তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনিত হলেন যে অ্যাডোনিস, বছরের ৪ মাস কাটাবে জিউস এর সাথে, ৪ মাস পাতালপুরির রানী এর সাথে , এবং বাকি ৪ মাস প্রেমের দেবী আফ্রোদিতি এর সাথে।


অ্যাডোনিস ও আফ্রোদিতিঃ শিল্পীর চোখে।


অ্যাডোনিস কোন এক কারনে আফ্রোদিতিকে বেশ পছন্দ করত, এবং তার সাথে সময় কাটাতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করত। প্রায়শই অ্যাডোনিস আফ্রোদিতি এর সাথে লুকোচুরি খেলায় মত্ত হতো, আফ্রোদিতি এর রথ তাড়া করে বেড়াত, এবং আফ্রোদিতি কে অনুসরন করতো দুর্গম বন বনানীতে। কিন্তু অ্যাডোনিস এর ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না , অথবা এটাকে আফ্রোদিতি এর ও দুর্ভাগ্য বলা যায় যে একদিন আফ্রোদিতিকে খুজতে যেয়ে অ্যাডোনিস এক হিংস্র বন্য শুকর এর সামনে পড়ে। বলা হয়ে থাকে বন্য শুকরটি প্রেরিত হয়েছিলো আরেক শিকারি দেবী আর্টেমিস এর দ্বারা, যদিও আর্টেমিস এটি কেন করেছিলেন তার কারন অজ্ঞাত। আবার অনেকে মনে করেন অ্যাডোনিসের রুপে ঈর্ষান্বিত হয়ে অ্যারেস প্রেরন করেছিলেন বন্য শুকরটি, কারন অ্যারেস আফ্রোদিতিকে ভালবাসতেন এবং তিনি অ্যাডোনিসের প্রতি আফ্রোদিতির ভালোবাসাকে মেনে নিতে পারেন নি।



বন্য শুকরটিকে অ্যাডোনিস প্রায় কাবু করে ফেলেছিলো। এমনকি অ্যাডোনিসের বর্শা শুকরটিকে বেশ ভালো রকম ভাবেই আহত করেছিলো। কিন্তু কোণঠাসা শুকরটা হঠাৎ করেই ছুটে এসে আঘাত করলো অ্যাডোনিসকে এবং তাকে বিদ্ধ করলো তার দীর্ঘ দাতে। রক্তাক্ত অ্যাডোনিস মাটিতে পতিত হল মুহূর্তেই।



দেবী আফ্রোদিতি তখন বেশ দূরে ছিলেন। তিনি রথে থাকাবস্থাতেই বুঝেছিলেন যে বিপদে পড়েছে অ্যাডোনিস। কিন্তু তিনি যতক্ষণে অ্যাডোনিসকে রক্ষা করতে ছুটে এলেন, ততক্ষনে বেশ দেরী হয়ে গেছে। হাঁটু গেড়ে তিনি বসে পড়লেন অ্যাডোনিসের পাশে। অশ্রুসিক্ত নয়নে চেয়ে রইলেন তার দিকে। অ্যাডোনিসের ঠোটে এঁকে দিলেন এক দীর্ঘ চুম্বন, কিন্তু তখন অ্যাডোনিসের প্রান চলে গিয়েছিলো মর্ত্য থেকে, পড়ে ছিল শুধু অ্যাডোনিসের দেহ খানি।


অ্যাডোনিস ও আফ্রোদিতি

সৌন্দর্যের আর প্রেমের দেবী নিজেও ভোগ করলেন বিচ্ছেদের তীব্র ব্যাথা। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস থেকে মুক্তি পেলেন না তিনিও, আপন করতে পারলেন না নিজের প্রেম খানি। অ্যাডোনিস এবং আফ্রোদিতি এর প্রেম কাহিনী তাই মহাকাব্য হয়ে রইলো। প্রাচীন গ্রীসের মেয়েরা প্রতিবছরই পালন করে আসতো অ্যাডোনিস এর জন্য শোকগাঁথা।

শুক্রবার, ২৩ মার্চ, ২০১২

পৃথিবীর সবচেয়ে বড়, ছোট এবং জনপ্রিয় ডাইনোসররা



সেটি ছিল উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিককার কথা, যখন ডাইনোসরের প্রথম জীবাশ্ম আবষ্কৃত হয়।এরপর সারা পৃথিবীতে পর্বত বা শিলায় আটকা পড়ে থাকা ডাইনোসরের কঙ্কাল আবিষ্কৃত হতে থাকে। ডাইনোসর এই পৃথিবী নামক গ্রহের প্রাগৈতিহাসিক অধিবাসী।যারা প্রায় ১৬০ মিলিয়ন বছর ধরে পৃথিবীতে রাজত্ব করেছে।আর আজকের আধুনিক পাখিরা থেরোপোড ডাইনোসরদের সরাসরি বংশধর বলে ধারনা করা হয়।ডাইনোসর’ নামটি এসেছে গ্রিক ভাষা থেকে যার অর্থ “ভয়ঙ্কর টিকটিকি”। ১৮৪২ সালে ইংরেজ জীবাশ্মবিদ রিচার্ড ওয়েন ওদের অমন বিদঘুটে নামটি দেন।


আসুন আমরা সময়েরও মধ্য দিয়ে, ইতিহাসেরও আগে গিয়ে ডাইনোসদের সাথে দেখা করে আসি...

পৃথিবীতে ওদের বিস্তার হয় আজ থেকে প্রায় ২৪০ মিলিয়ন বছর আগে।আর তখনকার সময়কে বলা হয় মেসোজোয়িক যুগ।তবে এটা “ডাইনোসর যুগ” বলেও বেশ পরিচিত। মেসোজোয়িক এরাকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়-

_____________ ট্রায়াসিক
_____________জুরাসিক এবং
______________ ক্রিটেশিয়াস যুগ।

আজ থেকে ২২৫ মিলিয়ন বছর আগের কথা , সেটি ছিল ট্রায়াসিক যুগ,পৃথিবীর সবগুলো মহাদেশ তখন একসাথে জোড়া লাগানো ছিল আর এর নাম ছিল প্যানজিয়া।তখনকার সময় বেঁচে থাকার জন্য খুবই প্রতিকূল ছিল।










জুরাসিক যুগ হচ্ছে সেই সময় যখন এই পৃথিবী তার বুকে সবচেয়ে বড় প্রাণীগুলোর অস্তিত্ব অনুভব করে এবং ডাইনোসররা সেই আদিম পৃথিবীর প্রধান প্রাণীতে পরিনত হয়।সারা পৃথিবী তখন ছিল একটিমাত্র মহাদেশ, আর এই যুগেই এসে তা ভাঙতে শুরু করে, যার পরিসমাপ্তি ঘটে ক্রিটেশিয়াস যুগে এসে। আর যার ফলশ্রুতিতে ডাইনোসররা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

ক্রিটেশিয়াস যুগ এ এসে মহাদেশ গুলো আকৃতি নিতে থাকে আর আবহাওয়াও বদলে যেতে থাকে ব্যাপকভাবে।

এ পর্যন্ত ডাইনোসরের আবিষ্কৃত প্রজাতির সংখ্যা প্রায়৫০০ আর ডাইনোসরের বিচরণ ছিল পৃথিবীর প্রতিটি মহাদেশে, এমনকি এন্টার্কটিকায়ও এর অস্তিত্বের প্রমান পাওয়া গেছে।বিভিন্ন ডাইনোসর দের ফসিল এর প্রাপ্তিস্থান আর তারিখ এর লিস্ট আছে এই সাইটটিতে।
Dinolist



Jim Jensen এর সাথে Ultrasaurus Leg নামক ডাইনোসর।






এই উপমহাদেশে প্রাপ্ত ফসিল সমূহ।









সবচেয়ে জনপ্রিয় ডাইনোসর Tyrannosaurus rex





সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত ডাইনোসর Iguanodon.





সবচেয়ে বড় আকারের ডাইনোসর Argentinosaurus hinculensis





সবচেয়ে বৃহৎ মাংসাশী ডাইনোসর Giganotosaurus carolinii





সবচেয়ে ছোট ডাইনোসর Compsognathus longipes




সবচেয়ে চওড়া ডাইনোসর Ankylosaurus magniventris











সবচেয়ে লম্বা গলার অধিকারী ডাইনোসর Mamenchisaurus





সবচেয়ে দ্রুতগামী ডাইনোসর Ornithomiminee








সবচেয়ে চতুর ডাইনোসর Troodontids







সবচেয়ে নির্বোধ ডাইনোসর Stegosaurus




সর্বপ্রথম ডাইনোসর Eoraptor lunensis











সবচেয়ে বিতর্কিত ডাইনোসর Apatosaurus







সবচেয়ে সুরক্ষিত Ankylosaurus ডাইনোসর





আজ থেকে 65 মিলিয়ন বৎসর আগে এই পৃথিবী থেকে ডাইনোসরের বিলুপ্তি ঘটে।তবে ডাইনোসরের বিলুপ্তির সঠিক কারণ এখনো পুরোপুরিভাবে জানতে পারা যায়নি।লক্ষ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীতে আঘাত হানা বিশালকায় ধূমকেতু কিংবা গ্রহাণুখন্ডের কারণে ডাইনোসরের বিলুপ্তি ঘটে থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।

অনেকের মতে উল্কার আঘাতে নয় বরং আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে এদের বিলুপ্তি ঘটে।

এছাড়াও খাদ্যাভাবও একটি বড় কারণ বলে মনে করা হয়।

তাছাড়া সেসময় পৃথিবীব্যাপী তাপমাত্রার এক ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে যার সাথে অভিযোজিত হতে না পেরে অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয় বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।

কিন্তু অনেক বিজ্ঞানী আবার এসব তত্বকে উড়িয়ে দিয়ে ডাইনোসর দের ডিমের খোসার পুরুত্বকে দায়ী করেন।বিভিন্ন পরীক্ষায় মাধ্যমে দেখা যায় যে, ছয় কোটি বছর আগের ডিমের খোসা ১৪ থেকে ১৫ কোটি বছর আগের ডিমের খোসার চেয়ে অনেক বেশী পুরু ছিল। ফলে ডাইনোসরদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সহ প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পেত।কালক্রমে তারা বিলুপ্তির পথে পা বাড়ায় ।