বুধবার, ২৮ মার্চ, ২০১২

অ্যাডোনিসঃ প্রেমের দেবী আফ্রোদিতি যার সৌন্দর্যে অন্ধ হয়েছিলেন !

Justify Full


Justify Full

গ্রীক পুরানে বর্ণিত সবচেয়ে সুন্দর ও আকর্ষণীয় পুরুষ হলেন অ্যাডোনিস। তার সৌন্দর্য এতোটাই বেশি ছিল যে প্রেমের দেবী আফ্রোদিতি পর্যন্ত তাকে ভালবেসে ফেলেছিলেন।
গ্রীক পুরানে বর্ণিত অ্যাডোনিস ও দেবী আফ্রোদিতি এর কাহিনীটি তাই বেশ জনপ্রিয় এবং বিয়োগান্তক ও বটে।



সুপুরষ অ্যাডোনিস এর পরিচয় দেয়া যাক। যদিও এটা কিছুটা বিব্রতকর , তবুও বলতে হয় অ্যাডোনিস ছিল মিরহা এর পুত্র, এবং অ্যাডোনিস এর জন্ম হয়েছিলো একটি পাপ এর পরিনতি হিসেবে। মিরহা ছিল রাজা থিয়াস( আরেক নাম সিনিরাস) এর অনন্য সুন্দরী কুমারী কন্যা। মিরহা এর সৌন্দর্য নিয়ে তার পিতার বেশ গর্ব ছিল। এমনকি তিনি মনে করতেন তার কন্যা সৌন্দর্যের দেবী আফ্রোদিতি এর চেয়েও বেশি সুন্দরী। আফ্রোদিতি অবশ্যই থিয়াস এর এই মনোভাব মেনে নিতে পারেন নি। তাই তিনি কন্যা মিরহা এর অন্তরে তৈরি করে দিলেন তার নিজেরই পিতার জন্য কামনার আগুন, যেটা থেকে শেষ পর্যন্ত মিরহা বের হয়ে আসতে ব্যর্থ হয়। দাসীদের সহযোগিতায় বেশ ছলনার সাহায্যে নিজের পরিচয় গোপন রেখে রাজা থিয়াস এর সাথে মিরহা মিলিত হয়, যার ফলাফল হিসেবে মিরহা এর গর্ভে আসে একটি সন্তান। রাজা থিয়াস যখন বুঝতে পারেন যে যার সাথে তিনি মিলিত হয়েছেন সেটি তার নিজেরই কন্যা তখন তিনি ক্রোধে মত্ত হয়ে পড়েন। তিনি মিরহা কে হত্যা করতে উদ্যত হলেন।



হতবিহব্বল মিরহা নিজের বিপদ বুঝতে পেরে পালিয়ে গেলো। সে করজোড়ে দেবতা কুলে প্রার্থনা করলো তাকে যেন অদৃশ্য অথবা লুকিয়ে ফেলা হয়। তার বিপদ দেখে আফ্রোদিতির দয়া হল। তিনি মিরহা কে পালিয়ে যেতে সাহায্য করলেন। তিনি মিরহা কে রূপান্তরিত করলেন একটি গাছে যাতে রাজা থিয়াস থাকে কখনো খুজে না পায়। তার নামানুসারে গাছটার নাম হয় পরবর্তীতে মীড় গাছ।




নয় মাস পরে গাছের গুড়ি ফেটে সেখান থেকে বের হয়ে আসলো একটি পুত্র সন্তান, যার নাম অ্যাডোনিস। দেবী আফ্রোদিতি ভূমিষ্ঠ অ্যাডোনিস কে দেখলেন এবং তার রুপে তৎক্ষণাৎ মুগ্ধ হলেন। আফ্রোদিতি অ্যাডোনিসকে অন্যভাবে চেয়েছিলেন, তিনি চেয়েছিলেন অ্যাডোনিস শুধু তারই হোক, তাই তিনি অ্যাডোনিস এর মাতৃভুমিকা নিতে চাইলেন না। তিনি বরং অ্যাডোনিসকে লুকিয়ে ফেললেন একটি সিন্দুকে এবং নিয়ে গেলেন দেবী পার্সিফোন এর কাছে। পার্সিফোন ছিলেন মৃতদের রানী ও পাতালপুরীর দেবী, তিনি অ্যাডোনিস এর অভিভাবকত্ব নিতে সম্মত হলেন।



শিল্পীর চোখে অ্যাডোনিসের জন্ম

কিন্তু ঝামেলা তখনই তৈরি হল যখন অ্যাডোনিস বড় হতে লাগলো, এবং আফ্রোদিতি পার্সিফোন এর কাছে অ্যাডোনিসকে দাবী করলেন। পার্সিফোন ও অ্যাডোনিসকে ভালবেসে ফেলেছিলেন এবং অ্যাডোনিসকে দিতে চাইলেন না।


পার্সিফোনঃ শিল্পীর চোখে


অ্যাডোনিস


আফ্রোদিতিঃ শিল্পীর চোখে

দুই দেবীর মাঝে চরম বিদ্বেষ তৈরি হল, এবং কেউই অ্যাডোনিসকে হারাতে চাইলেন না। অবশেষে জিউস আসলেন মধ্যস্ততাকারী হিসেবে। তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনিত হলেন যে অ্যাডোনিস, বছরের ৪ মাস কাটাবে জিউস এর সাথে, ৪ মাস পাতালপুরির রানী এর সাথে , এবং বাকি ৪ মাস প্রেমের দেবী আফ্রোদিতি এর সাথে।


অ্যাডোনিস ও আফ্রোদিতিঃ শিল্পীর চোখে।


অ্যাডোনিস কোন এক কারনে আফ্রোদিতিকে বেশ পছন্দ করত, এবং তার সাথে সময় কাটাতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করত। প্রায়শই অ্যাডোনিস আফ্রোদিতি এর সাথে লুকোচুরি খেলায় মত্ত হতো, আফ্রোদিতি এর রথ তাড়া করে বেড়াত, এবং আফ্রোদিতি কে অনুসরন করতো দুর্গম বন বনানীতে। কিন্তু অ্যাডোনিস এর ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না , অথবা এটাকে আফ্রোদিতি এর ও দুর্ভাগ্য বলা যায় যে একদিন আফ্রোদিতিকে খুজতে যেয়ে অ্যাডোনিস এক হিংস্র বন্য শুকর এর সামনে পড়ে। বলা হয়ে থাকে বন্য শুকরটি প্রেরিত হয়েছিলো আরেক শিকারি দেবী আর্টেমিস এর দ্বারা, যদিও আর্টেমিস এটি কেন করেছিলেন তার কারন অজ্ঞাত। আবার অনেকে মনে করেন অ্যাডোনিসের রুপে ঈর্ষান্বিত হয়ে অ্যারেস প্রেরন করেছিলেন বন্য শুকরটি, কারন অ্যারেস আফ্রোদিতিকে ভালবাসতেন এবং তিনি অ্যাডোনিসের প্রতি আফ্রোদিতির ভালোবাসাকে মেনে নিতে পারেন নি।



বন্য শুকরটিকে অ্যাডোনিস প্রায় কাবু করে ফেলেছিলো। এমনকি অ্যাডোনিসের বর্শা শুকরটিকে বেশ ভালো রকম ভাবেই আহত করেছিলো। কিন্তু কোণঠাসা শুকরটা হঠাৎ করেই ছুটে এসে আঘাত করলো অ্যাডোনিসকে এবং তাকে বিদ্ধ করলো তার দীর্ঘ দাতে। রক্তাক্ত অ্যাডোনিস মাটিতে পতিত হল মুহূর্তেই।



দেবী আফ্রোদিতি তখন বেশ দূরে ছিলেন। তিনি রথে থাকাবস্থাতেই বুঝেছিলেন যে বিপদে পড়েছে অ্যাডোনিস। কিন্তু তিনি যতক্ষণে অ্যাডোনিসকে রক্ষা করতে ছুটে এলেন, ততক্ষনে বেশ দেরী হয়ে গেছে। হাঁটু গেড়ে তিনি বসে পড়লেন অ্যাডোনিসের পাশে। অশ্রুসিক্ত নয়নে চেয়ে রইলেন তার দিকে। অ্যাডোনিসের ঠোটে এঁকে দিলেন এক দীর্ঘ চুম্বন, কিন্তু তখন অ্যাডোনিসের প্রান চলে গিয়েছিলো মর্ত্য থেকে, পড়ে ছিল শুধু অ্যাডোনিসের দেহ খানি।


অ্যাডোনিস ও আফ্রোদিতি

সৌন্দর্যের আর প্রেমের দেবী নিজেও ভোগ করলেন বিচ্ছেদের তীব্র ব্যাথা। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস থেকে মুক্তি পেলেন না তিনিও, আপন করতে পারলেন না নিজের প্রেম খানি। অ্যাডোনিস এবং আফ্রোদিতি এর প্রেম কাহিনী তাই মহাকাব্য হয়ে রইলো। প্রাচীন গ্রীসের মেয়েরা প্রতিবছরই পালন করে আসতো অ্যাডোনিস এর জন্য শোকগাঁথা।

২টি মন্তব্য: