বুধবার, ২৮ মার্চ, ২০১২

বাগদাদের ব্যাটারি এবং পীরি রইস এর ম্যাপ।রহস্যময় দুনিয়া-২

রহস্যময় পাত্র-১৯৩৮ সাল।ইরাক জাতীয় জাদুঘরের পরিচালক জার্মান প্রত্নতত্ত্ববিদ ডব্লিউ কনিং জাদুঘর পরিদর্শনে বের হলেন।হঠাৎ তার চোখ পড়ল পার্সিয়ান যুগের একটি হলদাঠে পাত্রের উপর।পাত্রটি ১৯৩৬ সালে বাগদাদের নিকটবর্তী খুজুত রাবু নামক গ্রাম থেকে মাটি খুড়ার সময় আবিষ্কার করা হয়।ভাল করে ৬ ইঞ্চি উচু পাত্রটি লক্ষ্য করতেই ভদ্রলোক বেশ অবাক হল।পাত্রটির ভিতর ৫ ইঞ্চি উচু ও দেড় ইঞ্চি বেড়ের কপার সিলিন্ডার এবং এর মাঝে একটি লোহার দন্ড বিদ্যমান।সিলিন্ডারটির নীচের অংশ কপার ডিস্ক দ্বারা আচ্ছদকৃত অবস্থায় বিটুমিন দ্বারা সিলকৃত ।সিলিন্ডারটির কিনারা ৬০-৪০ লেড-টিন সংকর ধাতুর আস্তরে ঝালাইকৃত ছিল যা একটি আধুনিক ঝালাই এর সাথে তুলনীয়।উপরের অংশটিও বিটুমিন দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল।এবং ভিতরের রডটিতে এসিডিক এজেন্ট দ্বারা ক্ষয়ের সুষ্পষ্ট চিহ্ন বিদ্যমান।
কপার এবং আয়রনের যুগল অবস্থা এবং এসিডিটির লক্ষণ দেখে কনিং মোটামুটি নিশ্চিত হলেন এই পাত্রটি বিদুৎ উৎপাদনে ব্যবহার হত।এই নিয়ে আরো গবেষনা শেষে ১৯৪০ সালে তিনি লেখালেখি শুরু করেন।এবং তিনি সুস্পষ্টভাবে ঘোষনা দেন যে এই পাত্রটি প্রাচীন যুগের ব্যাটারি।যা বর্তমানে বাগদাদের ব্যাটারি নামে পরিচিত।

সমস্যা কোথায়?-প্রাচীন যুগের মানুষরা এই পাত্রটিকে ব্যাটারি রুপে ব্যবহার করেছিল তার প্রমাণ কি? আর করলেই বা সমস্যা কি? আপনার মনে হয়ত এ প্রশ্ন উঠতে পারে।
১৯৪০ সালেই জেনারেল ইলেকট্রিক এর ইন্জিনিয়ার "উইলার্ড এফ, এম, গ্রে" "কনিং" এর লেখা পড়েন।তিনি জার্মান রকেট বিজ্ঞানী উইলি লে এর সহযোগীতায় বাগদাদ ব্যাটারির হুবুহু একটি মডেল তৈরী করেন।কপার সালফেট দ্রবণ ব্যবহার করে তিনি হাফ ভোল্ট বিদুৎ উৎপাদনে সক্ষম হন।একই মডেলে ১৯৭০ সালেও ০.৮৭v বিদুৎ উৎপাদন করা হয়।এখন কথা হচ্ছে আমরা জানি ভোল্টা ১৮০০খ্রি: প্রথম ড্রাইসেল ব্যাটারি আবিষ্কার করেন।কিন্তু প্রাচীন এ ব্যাটারী আবিষ্কারের ফলে প্রমাণিত হয় ১৮০০ সালের আগেই পৃথিবীতে ব্যাটারি আবিষ্কৃত হয়েছিল। যা ব্যাটারি আবিষ্কারের ইতিহাসকে কমপক্ষে আরও ১৮০০ বছর পিছনে ফেলে দিবে।তাহলে প্রাচীন যুগে কি আমাদের জানার বাইরে এমন কোনো সভ্যতা ছিল যা জ্ঞান বিজ্ঞানে অনেক অগ্রসর ছিল? আমাদের ইতিহাসবিদরা যা জানেন এবং যা আমাদের শিখিয়েছেন তবে কি তা ভুল?
বাগদাদের ব্যাটারি


উইলার্ড গ্রে এর তৈরী করা রিপ্লেক্যা



পীরি রইস এর ম্যাপ
১৯২৯ সালের ৯ অক্টোবর জার্মান ধর্মতত্ববিদ জি,এডলফ ডেইসমান টোপকাপি(তুরস্ক) প্রাসাদ এ কাজ করার সময় এর লাইব্রেরী থেকে একটি প্রাচীন ম্যাপ খুজে পান।ম্যাপে পাওয়া তত্ত্বমতে এ ম্যাপটি ১৫১৩খ্রি: এ সংকলিত করেছিলেন তুর্কি নৌ অ্যাডমিরাল পীরি রইস ।তিনি ম্যাপটি আকাতে অ্যারাবিয়ান,ইন্ডিয়ান,পুর্তগীজ এবং কলম্বাসের ম্যাপের সাহায্য নেন।ম্যাপটিতে ইউরোপের পশ্চিম উপকূল থেকে ধরে পশ্চিম আফ্রিকার উপকূল থেকে দক্ষিন আমেরিকার পূর্ব প্রান্থ এবং অ্যান্টর্কটিকার উত্তর উপকূল পর্যন্ত নিখুতভাবে অংকিত আছে।এতে নিখুতভাবে আকা আছে আটলান্টিক এর বিভিন্ন দ্বীপমালা এবং জাপান।বর্তমানে ম্যাপটি টোপকাপি প্রাসাদের লাইব্রেরী এবং একটি কপি বালির্ন এর স্টেট লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে। এবং তা জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত নয়।যা বর্তমানে পীরি রইস এর ম্যাপ নামে পরিচিত।

রহস্যটা কোথায়?- প্রাচীন যুগের মানুষ ম্যাপ একেছে এতে সমস্যা কোথায়? সমস্যা হলো ম্যাপটির অনেক অংশ বর্তমান যুগের মানচিত্রর সাথে প্রায় নিখুতভাবে মিলে যায়।তাছাড়া সবচেয়ে বড় ধাধা হল অ্যান্টর্কটিকাকে নিয়ে।যদি পীরি রইস প্রথম ম্যাপের এ অংশটি আকেন তবু ধাধা থেকে যায় কারন ১৫১৩ সালে অ্যান্টর্কটিকা আবিষ্কৃত হয়নি।মহাদেশটি আবিষ্কার হয়েছে ১৭৭৩ খ্রি:এ ।এর কিছু অংশ আবিষ্কার হয়েছে বিংশ শতাব্দিতে এসে।তাছাড়া ম্যাপটিতে অ্যান্টর্কটিকার কুইন মাউড ল্যান্ড কে আইস-ফ্রি জোন হিসাবে দেখানো হয়েছে।যা জটিলতা আরও বাড়ায়।কারন সর্বশেষ কুইন মাউড ল্যান্ড আইস-ফ্রি জোন ছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০০ হাজার বছর আগে। এত আগে কোন মানব সভ্যতা এত উন্নত ছিল যারা এধরনের একটি ম্যাপ আকতে সক্ষম ছিল?তাহলে কি আমরা যে মানব সভ্যতার ইতিহাস জানি তা কি ভুল? প্রাচীনকালে কি এমন কোনো মানব সভ্যতা কি ছিল যারা জ্ঞান বিজ্ঞান বা প্রযুক্তিতে অনেক অগ্রসর ছিল?তবে পীরি রইস এর ম্যাপ এর রহস্য কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ম্যাপটি ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখতে পারবেন ভৌগলিক সীমারেখা আকতে উপর থেকে দেখতে হয়েছে।এই ম্যাপ নিয়ে রহস্য আরো বাড়িয়েছেন অধ্যাপক চালর্স এইচ, হ্যাপগুড এবং অঙ্কশাস্ত্রবিদ ডাবলিউ, স্টেচান।তাদের মতে এ ম্যাপের সাথে কৃত্রিম উপগ্রহ থেতে তোলা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের বেশ মিল আছে।যা উপর থেকে দেখে ম্যাপটি আকা হয়েছিল ধারনাকে আরও প্রতিষ্টিত করে। তাহলে কি প্রাচীন যুগের কোন মানবসভ্যতার কাছে বেলুন বা অন্য কোনো উড়ার যন্ত্র ছিল বা ছিল ছবি তোলার ক্যামেরা?
পীরি রইস এর ম্যাপ


ম্যাপে ইউরোপ

আধুনিক ম্যাপের সাথে পীরি রইস এর ম্যাপের তুলনা(দ: আমেরিকা অংশ)


এইসব রহস্যের ব্যাখ্যা কি?- ইতিহাসবিদ বা গবেষক কেউই এইসব রহস্যর কোনো ব্যখ্যা দেয় নি বা বলা ভাল দিতে পারেনি।তাই বলে কি আপনার চিন্তা থেমে থাকবে? আপনি ধারনা করতে পারেন টাইম মেশিনে করে আমাদের অদূর ভবিষতের কোনো প্রজন্ম হয়ত অতীতে গিয়েছিল। তারা হয়ত এসব করতে পারে।বা ধারনা করতে পারেন আটলান্টিস এর মত কোনো অতি উন্নত সভ্যতা হয়ত প্রাচীনকালে ছিল।যা পরবর্তীকালে কোনো কারনে ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে আমি এইভাবে ভাবি না।আমার ধারনাটা অন্যরকম। এইসব রহস্যময় নিদর্শন নিয়ে আরো কিছু লেখা আপনাদের সাথে শেয়ার করার ইচ্ছা আছে আমার।তারপর সিদ্ধান্ত।

২টি মন্তব্য: