শুক্রবার, ২৩ মার্চ, ২০১২

গ্রীক পুরান অনুযায়ী নারীরা যেভাবে সৃষ্টি হল


তখন মানব জাতি সৃষ্টির সুবর্ণ সময়।দেবতারা প্রথমে এই ভার অর্পন করেছিলেন এপিমিথিউস উপরে। যিনি ছিলেন অপরিনামদর্শী।নিয়ত অনুসরন করতেন প্রথম প্রনোদনা এবং তারপরে পালটে ফেলতেন তার মন। এই ক্ষেত্রেও তিনি তাই করলেন। মানব সৃষ্টির পুর্বেই তিনি সকল সুষমা দান করলেন জন্তু জানোয়ারদের, শক্তি ক্ষিপ্রতা, সাহস এবং ধুর্ততা, পশম এবং পালক, ডানা এবং এরকম সবকিছু।এবং যথারীতি তিনি এজন্য দুখিত হলেন, এবং এই ভার পেশ করলেন তার ভাই প্রমিথিউস এর উপর। প্রমিথিউস ছিলেন মহাজ্ঞানী, এমনকি দেবতাদের চেয়েও জ্ঞানী। তিনি চলে গেলেন সুর্যের কাছে, যেখানে তিনি প্রজ্জলিত করলেন একটি অগ্নিশিখা এবং নিয়ে এলেন অগ্নি। যা অন্য কিছু থেকে মানুষ কে দিল আলাদা বিশেষ কিছু।
প্রমিথিউস সর্বদা চেয়েছিলেন মানব জাতির জন্য কিছু করতে। বলাই বাহুল্য তখনও নারী জাতির আবির্ভাব কিন্তু হয়নি। প্রমিথিউস মানব জাতির জন্য শুধু আগুন ই চুরে করলেন না, তিনি এমন ব্যাবস্থা করলেন যেন দেবতার উদ্দেশ্য দেয়া পশুর অংশ থেকে মানুষ সর্বোত্তম অংশটুকু তার নিজের করে নিতে পারে। তিনি একটি বিশাল ষাড় জবাই করলেন এবং এর মাঝে ভালো অংশটুকু তিনি আচ্ছাদনে লুকিয়ে রাখলেন, এগুলোর উপর নাড়িভুড়ি স্তুপিকৃত করে আরো আড়াল করে ফেললেন। এই স্তুপের পাশে তিনি স্থাপন করলেন অস্থিসমুহ এর আরো একটি স্তুপ, এবং আচ্ছাদিত হলো উজ্জ্বল চর্বি দিয়ে। জিউসকে এই দুই থেকে তার জন্য নির্বাচন করে নিতে বলা হলে, তিনি যথারীতি ভুল নির্বাচন করলেন। কিন্তু যেহেতু তিনি পছন্দ করে ফেলেছিলেন, তাই তাকে তা মেনে চলতেই হল।
কিন্তু মানুষের পিতা, দেবতাদের পিতা এই অপমান সহ্য করবার পাত্র ছিলেন না।তিনি অঙ্গিকার করলেন মানব জাতি ও তার বন্ধুটির উপর প্রতিশোধ নিবার। তিনি মানুষের জন্য সৃষ্টি করলেন এক অতি অশুভ, এক স্নিগ্ধ এবং মনোহর সৃস্টি, এক সলাজ কুমারীর আদলে, এবং সকল দেবতা তাকে দিল উপহার সামগ্রী, রুপালী পোশাক পরিচ্ছদ এবং কারুকার্যময় অবগুন্ঠন, যা দেখতে ছিল বিস্ময় এবং প্রস্ফুটমান ফুলের উজ্জ্বল মালা এবং একটি সোনার মুকুট, যা থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছিল অপরুপ সৌন্দর্য। তারা তাকে যে সব উপহার দিল, সেজন্য তার নাম দিল প্যান্ডোরা, যার অর্থ হলো সকল উপহারের সম্মেলন।যখন এই সুন্দর সর্বনাশটি জিউস বাইরে নিয়ে এলেন এবং বিস্ময়ে ভরে গেল দেবতা এবং পুরুষদের দৃস্টি।আর বাকি গুলো নাই বলি।

৪টি মন্তব্য:

  1. কেউ কেউ বলে থাকেন, দেবী হেরার সাহায্য নিয়ে প্রমিথিউস অলিম্পাস পাহাড়ে দেবতাদের বাসস্থান থেকে আগুন চুরি করে আনেন। আবার কোনো কোনো মিথে দেখা যায়, আগুন আগে পৃথিবীতেই ছিলো, মানুষ আগুনের ব্যবহার জানতো, কিন্তু জিউস সেটা ছিনিয়ে নিয়েছিলেন এবং প্রমিথিউস আবার তা ফিরিয়ে এনেছেন। এইসব মিথে বর্ণিত আছে, জিউস একবার মানুষকে বললেন দেবতাদের উদ্দেশ্যে খাবারের একটি অংশ উৎসর্গ করতে। মানববন্ধু প্রমিথিউস মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। তিনি খাবারের দুটি প্রস্ত তৈরী করেন। একটি ছিলো বাইরের দিকে সাড়ম্বরপূর্ণ, কিন্তু ভিতরে ষাড়ের হাড় এবং চর্বি ছাড়া কিছুই নেই। অন্য খাবারটি দেখতে ছিলো অপছন্দনীয়, কিন্তু ভিতরে ছিলো ষাড়ের মাংশ। জিউস প্রলুদ্ধ হয়ে যেটি দেখতে সুন্দর সেটি নিলেন। সেই থেকে মানবজাতি দেবতাদের উদ্দেশ্যে হাড়সর্বস্ব চর্বি উৎসর্গ করতো, আর নিজেদের জন্য মাংশ রেখে দিতো। জিউস খুবই ক্ষুদ্ধ হলেন, তিনি মানুষের কাছ হতে আগুন কেড়ে নিলেন। প্রমিথিউস সেটা চুরি করে এনে আবার মানুষকে ফিরিয়ে দিলেন।
    তিনি শীতে কাবুপ্রায় কিছু মানুষকে গুহা থেকে ডাকলেন, আগুন জ্বালালেন, তাদেরকে শিখালেন কীভাবে আগুনের সাহায্যে নিজেদেরকে উষ্ণ রাখবে, কীভাবে আগুনের সাহায্যে অন্যান্য জিনিস তৈরী করবে। প্রমিথিউস আগুন দিয়ে মানবজাতিকে শেখালেন কীভাবে রান্না করতে হয়, কীভাবে পশুর মতো জীবন পরিহার করে ভদ্রভাবে বেঁচে থাকা যায়। তারা গুহা ছেড়ে খোলা জায়গায় থাকা শুরু করলেন, জীবন হয়ে উঠলো আনন্দময় এবং প্রাচুর্যময়।
    প্রমিথিউস ধীরে ধীরে মানুষকে অনেক কিছুই শেখালেন। তিনি দেখালেন কীভাবে পাথর এবং কাঠ দিয়ে বাড়ি তৈরী করতে হয়, শেখালেন কীভাবে ভেড়া এবং গরুকে পোষ মানাতে হয়, কীভাবে ভূমিকর্ষণ করে শস্য বুনতে হয়, কীভাবে শীতে, ঝড়ে নিজেকে রক্ষা করতে হয়। মানবজাতির উন্নতি দেখে প্রমিথিউস উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন, তিনি আনন্দে চিৎকার করে বলে উঠলেন, “এক নতুন সোনালী যুগ অতি শিঘ্রই আসবে, যা হবে আগের চেয়ে উজ্জ্বল এবং সমৃদ্ধশালী”।
    হয়তোবা সবকিছুই প্রমিথিউসের ইচ্ছামতোই ঘটতো, যদি না একদিন অলিম্পাস পাহাড় থেকে জিউস উঁকি দিয়ে নীচে পৃথিবীর দিকে না তাকাতেন! তিনি তাকিয়ে দেখেন, আগুন জ্বলছে, মানুষ বাড়িতে বাস করছে, গোবাদি পশু পাহাড়ে চড়ছে, আর মাঠে অবারিত শস্যক্ষেত। জিউস এসব দেখে চমকে উঠলেন, তিনি হুংকার দিয়ে জানতে চাইলেন, কে মানবজাতিকে আগুন দিয়েছে। কোনো এক দেবতা বলে উঠলেন, “প্রমিথিউস”।

    উত্তরমুছুন
  2. জিউস প্রমিথিউসের উপর দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষুদ্ধ হলেন। তিনি মানবজাতি এবং প্রমিথিউস- দুইকেই শাস্তি দিতে মনস্থির করলেন। তিনি জানেন, প্রমিথিউসকে শস্তি দেওয়া কোনো ব্যাপার নয়। তাই প্রমিথিউসকে শাস্তি দেওয়ার আগে তিনি খুবই অভিনব পন্থায় মানবকে শাস্তি দিতে চাইলেন। জিউস স্বগতোক্তি করলেন, “ঠিকাছে, মানুষ আগুন ব্যবহার করুক। কিন্তু আমি মানুষকে এখন যা দিবো, তার জন্য সে দশগুণ কষ্ট ভোগ করবে!”
    প্রথমে জিউস তাঁর পুত্র এবং দেবতাদের কামার হেফাস্টিয়াসকে আদেশ দিলেন এমন এক মানুষ তৈরী করতে যা দেখে প্রতিটি মানবের হৃদয় তাকে পাওয়ার আকাঙ্খায় পেয়ে বসবে। মাটির পিন্ড দিয়ে হেফাস্টিয়াস তৈরী করলেন পৃথিবীর প্রথম মানবী। এরপর সেই মানবীকে হেফাস্টিয়াস সকল দেবতা পরিবেষ্টিত জিউসের সামনে উপস্থিত করলেন। হেসিয়ডের থিওগোনীতে এর চেয়ে সেই মানবী সম্পর্কে বেশি কিছু লেখা নেই, এমনকি নামটিও পর্যন্ত নেই। কিন্তু হেসিয়ড তাঁর ‘ওয়ার্কস এন্ড ডেইজ’- এ আবার মানবী সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, মানবীকে জিউসের সামনে নিয়ে এলে জিউস সবাইকে আদেশ দিলেন- এই মানবীর মধ্যে সব ভালো ভালো জিনিস দিতে। জ্ঞানের দেবী এথেনা তাকে সুঁই সুতার ব্যবহার এবং বয়ন করা শেখালেন, সৌন্দর্য্য এবং প্রেমের দেবী আফ্রোদিতি তাকে দিলেন অতুলনীয় রুপ, হার্মিস দিলেন বিনয়াবনত মন ও কৌতুহলী স্বভাব, আরো দিলেন মিষ্টি কন্ঠস্বর। এথেনা তখন তাকে রুপালী গাউনে আবৃত করলেন, ক্যারিস নামের দেবীরা তাকে অলংকারে সুশোভিত করলেন, আর হোরাই নামের দেবীরা তার মাথায় পরিয়ে দিলেন ফুলের মুকুট। সবশেষে হার্মিস মানবীটির নাম দিলেন ‘পান্ডোরা’- মানে ‘সব উপহার দেওয়া হয়েছে’। পান্ডোরাকে এমনভাবে তৈরী করা হলো, পৃথিবীর কেউ দেখে তাকে ভালো না বেসে থাকতে পারবে না।
    পান্ডোরাকে দেবতারা যা দিয়েছিলেন, তার ভিতরে কৌতুহলী স্বভাবটিই ছিলো মানবজাতির জন্য দুশ্চিন্তার কারণ। দেবতারা পান্ডোরাকে সমস্ত মানবীয় গুণাবলী ছাড়াও আরেকটি জিনিস দিলেন, সেটি হচ্ছে একটি মুখবন্ধ জার, (ষোড়শ শতকে সাহিত্যিকদের লেখনীতে কীভাবে যেনো জার হয়ে গেলো বাক্স! সেই থেকে বলা হতে লাগলো ‘পান্ডোরার বাক্স’, অথচ হেসিয়ড লিখেছিলেন ‘পান্ডোরার পিথস বা জার’!) যার ভিতরে ছিলো দুর্বহ পরিশ্রম ও জরা-ব্যাধিসমূহ যা মানুষের মৃত্যু ডেকে আনে, ছিলো রোগ, অন্যান্য অসংখ্য যন্ত্রনা, ক্লিষ্টসমূহ, লোভ লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, প্লেগ, দুর্ভিক্ষ আর ছিলো আশা! কেউ কেউ বলেন দেবী এথেনা বিদায় মূহূর্তে পান্ডোরাকে নিষেধ করেছিলেন, সে যেনো জারের বন্ধ মুখ কখনো না খুলে!

    উত্তরমুছুন
  3. এরপর পান্ডোরাকে নিয়ে পৃথিবীর যে জায়গায় প্রমিথিউস এবং এপিমেথিয়াস বসবাস করছিলেন, সেদিকে এলেন জিউসের বার্তাবাহক হার্মিস। হার্মিসের সাথে প্রথমে এপিমেথিয়াসের দেখা হলো। হার্মিস বললেন, “এপিমেথিয়াস, তোমার জন্য জিউস উপহার পাঠিয়েছেন। তুমি এই মানবীকে বিয়ে করো”। প্রমিথিউস পূর্বেই এপিমেথিয়াসকে সাবধান করেছিলেন জিউস থেকে কোন কিছু গ্রহন না করতে, কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন জিউস এতো সহজে তাদেরকে ছেড়ে দিবেন না! কিন্তু পান্ডোরাকে দেখে এপিমেথিয়াস প্রমিথিউসের নিষেধ বাণী ভুলে গেলেন। পান্ডোরাকে নিয়ে তিনি ঘরে এলেন, এবং বিয়ে করলেন।
    নতুন জীবনে পান্ডোরা খুব সুখী ছিলেন। এমনকি প্রমিথিউসও তার সৌন্দর্য্য দেখে এপিমেথিয়াসের বিয়ে করাকে মেনে নিয়েছিলেন। সুখী জীবন পান্ডোরার ভালো লাগলো না! তিনি সারাক্ষণ জারের দিকে তাকিয়ে থাকতেন, আর চিন্তা করতেন কি আছে এর ভিতরে। ভাবতে লাগলেন, নিশ্চয়ই এর ভিতরে মূল্যবান অলংকার আছে। আর এই জার যদি সে ব্যবহারই করতে না পারে, তাহলে জিউস শুধু শুধু দিলেন কেনো? এথেনা নিশ্চয়ই ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে এই জারের মুখ খুলতে মানা করেছেন! এথেনা তো সুন্দরী নয়, তাই সে অলংকারগুলো পান্ডোরাকে দেখতে দিতে চায় না! কী হবে একবার খুললে! কেউ দেখবে না!
    অবশেষে প্রবল কৌতুহলের কাছে সতর্কবাণী পরাস্ত হলো।
    পান্ডোরা জারের ঢাকনাটি সামান্য পরিমাণে খুললেন, শুধুমাত্র ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখার জন্য যতটুকু খোলা দরকার। এরই মধ্যে শোঁ শোঁ শব্দ আর খচমচে আওয়াজ শুরু হলো, খুব দ্রুত ঢাকনা বন্ধ করে দেবার আগেই সেখান থেকে অজস্র মৃত্যুরুপ অস্থিচর্মসার ভয়ংকর জীব বের হয়ে গেলো, যেসব আগে কখনো পৃথিবীর কেউ দেখেনি! যা ছিলো আসলে সেইসব লোভ লালসা, প্লেগ, জরা-ব্যাধি, দুর্ভিক্ষ, রোগ ইত্যাদি- এরা বের হয়েই পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়লো আর খুঁজে বেড়াতে লাগলো মানবজাতিকে, দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে দেবার জন্য। এভাবেই জিউস মানবজাতির উপর প্রতিশোধ নিলেন। জারের ঢাকনাটি দ্রুত বন্ধ করে দেওয়ার জন্য ভিতরে একটি জিনিস আটকে গেলো, সেটি হলো ‘আশা’। হেসিয়ড অবশ্য তাঁর ‘ওয়ার্কস এন্ড ডেইজ’-এ লিখেননি ‘আশা’ কেনো জারের ভিতরে থেকে গেলো! তিনি অবশ্য শেষ করেছিলেন এই লিখে যে, “মরণশীলরা বুঝতে পারলো যে জিউসের কাছ থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়া সম্ভব নয় বা তাঁকে কখনো ধোঁকা দেওয়ায় সম্ভব নয়!” (যদিও জিউসকে বেশ ক’বারই ধোঁকা দেওয়া হয়েছে!)

    উত্তরমুছুন